গর্ভবতী থাকা অবস্থায় হাটার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
গর্ভবতী একজন নারীর জীবনের অন্যতম সেরা সময় গর্ভবতী অবস্থায় সক্রিয় থাকা এবং
আপনার দেহে ঘটে যাওয়া সমস্ত পরিবর্তনের সাথে সামাজসো হওয়া প্রয়োজনীয়
এই সমস্যা এড়ানোর সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে হাঁটাচলা করা যা আপনাকে সক্রিয় রাখবে
সুস্থ রাখতে এবং আপনার শরীরের ঘটে যাওয়া কিছু পরিবর্তনের সাথে সেট করতে সাহায্য
করবে তাহলে চলুন জেনে নেই গর্ভবতী অবস্থায় হাঁটার উপকারিতা
সূচিপত্রঃ গর্ভবতী থাকা অবস্থায় তার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
নিচের যে অংশ পড়তে চান করুন
- শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখে
- ওজন বৃদ্ধি করে
- ডায়াবেটি নিয়ন্ত্রণ রাখ
- প্রসাব শ্রম
- মেজাজ ভালো থাকে
- ব্যথা নিরাময় করে
- ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে
শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখে
শরীর সুস্থ রাখতে হাঁটার উপকারিতা অনেক যা বলে শেষ করা যাবে না বিশেষজ্ঞদের মতে
একজন সুস্থ মানুষকে পুরোপুরি ভালো এবং সক্রিয় থাকার জন্য হাঁটার প্রয়োজন বা
হাঁটার নির্দেশ দিয়ে থাকে যা তাদের রুটিন এ নিয়মিত রাখার পরামর্শ দিয়ে
থাকেন
যদি কোন গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই একজন গর্ভবতী নারীর
হাঁটার প্রয়োজনীয়তা বা উপকারিতা রয়েছে অনেক তারমধ্যে একটি হচ্ছে শারীরিক
সুস্থতা বজায় রাখ একজন নারী যখন গর্ভধারণ করে তখন তার শরীরে অনেক ধরনের পরিবর্তন
দেখা যায় যখন একজন গর্ভবতী নারী হাটা চলা করে
তখন শরীরের বিভিন্ন পেশী টোন করতে সাহায্য করে যা শরীরকে সুস্থ রাখে রোজ খানিক টা
হাঁটাহাঁটি খুবই উপকারী নিয়মিত হাঁটলে অনেক সুফল পাওয়া যায় দৈনন্দিন শারীরিক
পরিশ্রম না হওয়ার কারণে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা ধরনের অসুখ বিসুখ এরমধ্যে
ডায়াবেটি উচ্চ রক্তচাপ ওবেসিটি মাংসপেশীর শক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি অন্যতম এ সকল
সমস্যা এড়াতে অবশ্যই হাঁটাহাঁটি করা উচিত যা শরীরকে সুস্থ রাখবে
ওজন বৃদ্ধি করতে
প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা উচিত তবে আপনি চাইলে সপ্তাহে প্রতিদিন না
হাঁটলেও হাঁটতে পারেন সপ্তাহে পাঁচ দিন 30 মিনিট করে ১৫০ মিনিট হাঁটলেও আপনি
সুস্থ থাকবেন এমনিতেই একজন গর্ভবতী নারীর ওজন সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে কেননা
তার পেটে অতিরিক্ত পরিমাণ পানি এবং শিশু থাকে
আর এই শিশুর ওজন ও স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হাটাহাটি প্রয়োজন যদি নিয়মিত ভাবে
হাটাহাটি করা হয় তাহলে পেটে শিশুর ভালো থাকে ও ওজন ঠিকঠাক হয় অনেক সময় দেখা
যায় প্রসবের সময় কোন কোন শিশুর ওজন অনেক বেশি হয় যার কারণে অনেক কষ্ট হয় একটি
স্বাভাবিক প্রসব শ্রম হতে আবার অনেক সময় এমনও দেখা যায়
যে শিশুর ওজন খুবই কম এক্ষেত্রে শিশুর স্বাস্থ্য জন্য খুবই ক্ষতিকারক একটি দিক আর
এই সমস্যা গুলো এড়াতে ই হাঁটাহাঁটি খুবই প্রয়োজনীয় যদি কোন গর্ভবতী নারী
নিয়মিতভাবে হাঁটাহাঁটি করে থাকে তাহলে যেমন তার নিজেরও শরীরের ওজন ঠিক থাকবে
তেমনই তার পেটে অবস্থিত শিশুটি স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করবে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে
যারা ডায়াবেটিস রোগী নিয়মিত হাঁটাচলা তাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি এর ফলে রক্ত
শতকরার পরিমাণ সঠিক থাকে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও কমে যায় তাই দিনে অন্তত ৩০
মিনিট নিয়ম করে হাঁটুন এর ফলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে
আপনার ব্লাড সুগার লেভেল যা টাইপ দুই ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম তাছাড়াও
অয়াবিস রোগীদের ক্ষেত্রেও হাটাহাটির খুবই জরুরী যদি নিয়মিত ভাবে অন্তত ৩০ মিনিট
হাটাহাটি করা যায় তাহলে সহজে ই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এক্ষেত্রে
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য টাইপ দুই ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে
যার ফলে তারা যদি নিয়মিত হাটাহাটি করে তাহলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা
থাকে না বা জুকি কম করতে সাহায্য করে তাই বলা যায় গর্ভবতী নারীদের নিয়মিত
হাঁটাচলা করা উচিত টাইপ টু ডায়াবেটিস এমন আরো রোগ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে
এবং সুস্থ রাখবে
প্রসাব শ্রম
গর্ভবতী নারীদের হাঁটাহাঁটির বেশ উপকারিতা রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি
হচ্ছে প্রসাব শ্রম গবেষণায় দেখা গেছে যে যদি একজন গর্ভবতী নারী নিয়মিত ভাবে
হাঁটাচলা করে তাহলে তার একটি ছোট এবং আরো আরামদায়ক প্রসাব শ্রম হয় হাঁটার সময়
জরায়ুতে
একটি ছন্দবদ্ধ চাপ সৃষ্টি হয় যা অক্সিটোসিন হরমোন উৎপাদন করতে সাহায্য করে এই
হরমোন প্রসাদ শ্রম প্রেরণা জোগাতে কাজ করে এবং হাঁটার কারণে শিশুর প্রাকৃতিক
প্রসাবের জন্য সঠিক অবস্থানে থাকে জরায়ুর দিকে নেমে যেতে থাকে তাছাড়াও এই
হাঁটাহাঁটি শরীরের পেশী গুলোকে টোন দেয় যা কম ব্যথা সহ দ্রুত প্রসাব শ্রম করতে
সাহায্য করে
একটি সাধারণ প্রসবের জন্য একজন গর্ভবতী নারীকে নিয়মিত হাঁটাচলা করা উচিত এবং এ
হাটাহাটির সময়টা সকালে হলে খুব ভালো অতএব বলা যায় একটি সুন্দর স্বাভাবিক ও
দ্রুত সহ কম ব্যথা যুক্ত প্রসাব শ্রম পাওয়ার জন্য হাটাহাটি বেশ গুরুত্ব রয়েছে
তাই একজন গর্ভবতী নারীর উচিত নিয়মিত হাঁটাচলা করা
মেজাজ ভালো রাখতে
আমাদের সকলেরই জানা যখন একজন নারী গর্ভধারণ করে তখন তার শরীরে বেশ পরিবর্তন দেখা
যায় তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে একটি অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া বা খাবারের প্রতি
অনীহা সৃষ্টি হওয়া যার কারণে শরীর অনেকটাই দুর্বল থাকে ভালো থাকে না যার ফলে
অনেক সময় মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে
এই সমস্যা এড়াতে একজন গর্ভবতী নারী অবশ্যই হাঁটাহাঁটির মাধ্যমে অবলম্বন করতে
পারে যার সাহায্যে সে নিজেকে ভালো রাখতে সক্ষম হবে যদি একজন গর্ভবতী নারী নিয়মিত
30 মিনিট হাঁটাচলা করে তাহলে তার শরীরের খিদার মাত্রা একটু বাড়বে যার ফলে সে যে
খাবারটি পছন্দ করবে
সেটি খেতে পারবে যা তার শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করবে তাছাড়াও নিয়মিত হাঁটাচলা
করলে পরিপাকতন্ত্র ভালো থাকে এবং হজমে সাহায্য করে যা আপনার খিদার পরিমাণ বাড়াবে
এবং খাবারের প্রতি আগ্রহ করে তুলবে
ব্যথা নিরাময় করে
একজন গর্ভবতী নারীর শরীরে বেশ পরিবর্তন দেখা যায় যা যার শরীরের সাথে মানিয়ে
নিতে খুব সমস্যায় হয় এ সময় খাওয়া দাওয়ার প্রতি বেশ অনীহা সৃষ্টি হয় যার
কারণে যাই বেশিরভাগ সময় অসুস্থ বোধ হয় যার ফলে সব সময় বিছানাতেই বা রেস্ট থাকা
হয়
আর এই বিছানাতেই সব সময় শুয়ে বসে থাকার কারণে শরীরের বিভিন্ন ব্যথা হয় বিশেষ
করে পায়ের ব্যথা বা পা ফুলে যাওয়া আর এই সমস্যা এড়াতে হাটাহাটি বিশেষভাবে কাজ
করে যদি কোন গর্ভবতী নারী নিয়মিতভাবে হাটাহাটি করে তাহলে তার পা ফুলবে না বা
একাধিক সময় শুয়ে বসে থাকার কারণে পায়ে বা শরীরে কোন ব্যথা অনুভব করবে না
আর এর সঠিক ফলাফল পেতে নিয়মিতভাবে হাঁটাহাঁটি করতে হবে এছাড়াও একজন গর্ভবতী
নারী নিয়মিতভাবে হাঁটাচলা করলে পেটের শিশুটিও ভালো থাকবে
ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে
একজন গর্ভবতী নারীর ঘুমের সমস্যা হয় এক্ষেত্রে কারো কারো ঘুম বেশি হয় আবার কারো
কারো ঘুম হয় না আর এই অনিয়মিত ঘুমকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে হাটাহাটি অত্যন্ত
জরুরী নিয়মিতভাবে এই হাটাহাটি করে আপনার ঘুমকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে তাছাড়াও
গর্ভবতী থাকার প্রথম কয়েক মাস একটু বেশি এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যা একটু বেশি
হয়
যেমন খাবারের প্রতি অনীহা শরীর ঝিম ধরে থাকা বমি পাওয়া ইত্যাদি এইসবের কারণেও
অনেক সময় ঘুমের সমস্যা হয় বা ঘুম হয় না কিন্তু আপনি যদি এ সময় সঠিকভাবে না
ঘুমান তাহলে আপনার জন্য এবং শিশুর জন্য স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে
এর জন্য ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে আবার অন্যদিকে বেশি ঘুমালেও সমস্যা তাই এই ঘুমকে
নিয়ন্ত্রণ করতে হাটাহাটি করা বেশ জরুরী এ হাটাহাটি করার ফলে আপনার শরীর একটু
ক্লান্ত বোধ অনুভব করবে আর ওই সময় আপনি যদি ঘুমাতে যান তাহলে খুব সহজেই আপনার
ঘুম হবে তাই একজন গর্ভবতী নারীর নিয়মিত হাঁটাচলা করা উচিত
আরো জেনে নিন হাঁটার কিছু মাধ্যম ও পদ্ধতি
গর্ভবতী থাকা অবস্থায় আপনাকে প্রথম থেকেই হাঁটা শুরু করতে হবে এতে করে আপনার এবং
আপনার সন্তানের দুজনেরই স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এই সময় আপনাকে একটু সতর্কতার সাথে
হাটাহাটি করতে হবে এর জন্য অবশ্যই আপনি আপনার পায়ের উপযুক্ত জুতা ব্যবহার করবেন
যাতে করে হাটার সময় আপনার কোন সমস্যা না হয়
কোনভাবেই পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তাছাড়াও আপনি যে জায়গায় হাঁটবেন সে
জায়গাটি যেন সমতল হয়ে থাকে এক্ষেত্রে আপনার হাটা অনেক সহজ হবে হাঁটার সময়
আপনাকে আরেকটি বিষয়ে খুব ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে সেটি হচ্ছে সময় আপনি অবশ্যই
নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় থাকবে এক্ষেত্রে গর্ভবতীর প্রথম অবস্থায় ৪০ থেকে ৫০ মিনিট
হাঁটলেই যথেষ্ট
এবংশেষ অংশে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটলেই আপনি হাঁটার সঠিক ফলাফল পাবেন এ হাটাহাটির
বিষয়ে আরেকটি বিষয় খেয়াল করতে হবে সেটি হচ্ছে সময় কোন সময় হাঁটবেন এক্ষেত্রে
আপনি সকালে কিনবা সন্ধ্যায় হাঁটতে পারে তবে সকালে হাঁটলেই বেশি ভালো যা আপনাকে
এবং আপনার শিশুকে ভালো রাখবে সুস্থ রাখবে
শেষ কথা গর্ভবতী থাকা অবস্থায় হাঁটার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নি
গর্ভবতী অবস্থায় হাঁটাচলা করা একটি সুন্দর ব্যায়াম এবং এর প্রচুর উপকারিতা
রয়েছে এটি এমন একটি অনুশীলন যা আপনি খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারবেন এই হাটাহাটি
আপনাকে এবং আপনার শিশুকে বিভিন্নভাবে প্রটেক্ট করে থাকবে এবং আপনাকে উপহার দেবে
কম ব্যথা যুক্ত প্রসব সম এবং একটি সুন্দর স্বাস্থ্য সম্পন্ন সন্তান
প্রিয় পাঠক বিন্দুরা যদি আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে
অবশ্যই আপনাদের বন্ধুদের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করুন এবং তাদের জানার সুযোগ করে
দিন পড়ে যদি আপনাদের কোন মতামত জানানো থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন
এতক্ষণ কি আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ ভাল থাকবেন
সুস্থ থাকবেন
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url