কুরআন ও হাদিসের আলোকে রোজার তাৎপর্য গুরুত্ব এবং ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন
আসসালামু আলাইকুম আমি আশা করি আপনি যে তথ্য জানার জন্য এই আর্টিকেলটিতে প্রবেশ করেছেন সে তথ্যগুলি সহজেই জানতে পারবেন আর এজন্য আপনি আর্টিকেলটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন
রমজানের রোজা ইসলামের পাঁচ স্তরের মধ্যে অন্যতম একটি ঈমান নামাজ ও যাকাতের পরেই রোজার স্থান কুরআন মাজীদ ও হাদিসের আলোকে রোজার অনেক তাৎপর্য ও গুরুত্ব এবং ফজিলত রয়েছে আর এগুলো সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন
সূচিপত্র: কুরআন ও হাদিসের আলোকে রোজার তাৎপর্য গুরুত্ব এবং ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন
নিচের যে অংশ পড়তে চান ক্লিক করুন
- রোজার প্রতিদান আল্লাহতালা নিজেই দিবেন
- রোজা কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে
- রোজা অবস্থায় দোয়া কবুল হয় ও গুনাহ মাফ হয়
- আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম মাধ্যম
- রোজাদার পরকালে শহীদগণের দলভুক্ত থাকবে
- রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত
- রোজাদার মুখের গন্ধ মিশকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম
- রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল স্বরূপ
- রোজাদার জান্নাতে প্রবেশ করবে রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে
- আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন পানি পান করাবেন
- রোজা হল জান্নাত লাভের পথ
- শেষ কথা
রোজার প্রতিদান আল্লাহ তা'আলা নিজেই দেবেন
প্রত্যেক ইবাদতই ইবাদত কারী ব্যক্তির জন্য পক্ষান্তরে রোজা আমার জন্য তাই রোজার প্রতিদান আমি নিজেই দিব এ কথার তাৎপর্য হলো সকল ইবাদতই আল্লাহর সন্তুষ্ট ও নৈকত্ত লাভের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে তবুও রোজা ও অন্যান্য ইবাদতের মধ্যে একটি বিশেষ পার্থক্য রয়েছে যার কারণে আল্লাহ তাআলা বলেছেন রোজা আমার জন্য আর আমি এর প্রতিদান নিজের হাতেই দেব
আরো পড়ুনঃ রোজা কে কেন এত গুরুত্ব দেওয়া
রোজার এত বড় ফজিলতের কারণ এটাও হতে পারে যে রোজা ধৈর্যের ফল স্বরূপ আর ধৈর্য ধারণ কারীদের জন্য আল্লাহ তালার সুসংবাদ হল ধৈর্য ধারণকারী অগণিত সোয়াবের অধিকারী হবে সব মাখলুকের শ্রেষ্ঠ বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক
আল্লাহ তাআলা নিজেই যখন রোজার প্রতিদান বা পুরস্কার দিবেন তখন তা কি পরিমানে হতে পারে এক হাদিস থেকে জানা গেছে যে আল্লাহ যে রোজাদারকে প্রতিদান দিবে তা মাপা হবেনা এবং ওজনও করা হবে না অর্থাৎ বিনা হিসাবেই দিবেন
রোজ কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে
রোজার অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রোজাদার ব্যক্তির জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন রোজা ও কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে রোজা বলবি হে আল্লাহ আমি তাকে সকল ধরনের খাদ্য থেকে বিরতি রেখেছি
সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি সুতরাং আপনি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন এবং অপরপক্ষে কুরআন বলবে আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরতি রেখেছি অর্থাৎ সে রাতে না ঘুমিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করেছি অতএব আপনি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন এরপর তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে
রোজা অবস্থায় দোয়া কবুল হয় ও গুনাহ মাফ হয়
দোয়া কবুল হওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যম ও উপায় হচ্ছে রোজা অবস্থায় দোয়া করা রোজা অবস্থায় দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা সেই দোয়া কবুল করেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন রোজাদার ব্যক্তি ইফতারের সময় যদি কোন দোয়া করেন তাহলে সেই দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না
আরো পড়ুনঃ ইফতার এর সময় দোয়া করাকে কেন এত গুরুত্ব দেওয়া হয়
একজন রোজাদার ব্যক্তি সারাদিন রোজা রাখার পর যখন ইফতারের সামনে বিভিন্ন ধরনের খাবার সামনে নিয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চান বা দোয়া করেন তখন আল্লাহ তা'আলা বলেন আমার ইজ্জতের কসম অবশ্যই আমি তোমাকে সাহায্য করবো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সোয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে
আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম মাধ্যম
এক সাহাবী আল্লাহর রাসূলের দরবারে গিয়ে বললেন ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনি আমাকে কোন নেক আমলের আদেশ করুন যা আমাকে আমার আল্লাহর নৈকট লাভ করতে সহায়তা করবে তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তুমি রোজা রাখো কেননা এর সমতুল্য কিছুই নেই
তিনি পুনরায় বললেন ইয়া রসূলউল্লাহ আমাকে কোন এমন এক ইবাদতের কথা বলুন যা আমাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে বিশেষভাবে সহায়তা করবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তুমি রোজা রাখো এই রোজায় তোমাকে আল্লাহর নৈকত লাভ করতে সাহায্য করবে
রোজাদার পরকালে শহীদগণের দলভুক্ত থাকবে
এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ আমি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি আমি যদি এক কথায় সাক্ষ্য সাক্ষ্য দি যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং অবশ্যই আপনি আল্লাহর রাসূল ও যাকাত প্রদান করি এবং রমজান মাসে রোজা রাখি তাহলে আমি কাদের অন্তর্ভুক্ত হব তিনি বললেন অবশ্যই তুমি শহীদগণের দলভুক্ত হবে
রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত
একজন রোজাদার ব্যক্তির জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে প্রথমটি হচ্ছে সেই সারাদিন অনাহারে থাকার পর যখন সে ইফতারের সামনে নিয়ে বসবে এবং সে খাবার খাবে তখন সে অনেক আনন্দিত হয় অপরদিকে যখন সে তার রবের সাথে মিলিত হবে এবং তার রব তাকে রোজার প্রতিদান বা পুরস্কার নিজ হাতে দিবেন তখন সে অনেক আনন্দিত হবে
রোজাদার মুখের গন্ধ মিশক সুগন্ধির চেয়ে উত্তম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন সেই শর্তান শপথ যার হাতে মোহাম্মাদের জীবন রোজাদার ব্যক্তির মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধি ময় তাছাড়াও বিভিন্ন ধরনের হাদিস থেকে পাওয়া গেছে যে রোজাদার ব্যক্তির মুখে দুপুরের পর থেকে সাধারণত দুর্গন্ধ তৈরি হয় আর এই দুর্গন্ধ ফেরেশতাদের কাছেও অধিক পছন্দনীয়
রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল স্বরূপ
হযরত জাবির রাযিআল্লাহু হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আমাদের মহান রব ইরশাদ করেছেন রোজা হল ঢাল বান্দা এই রোজার দ্বারা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে পারবে
আরো পড়ুনঃ রোজা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
রোজা আমার জন্য আর আমি এর পুরস্কার দেবো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন রোজা হল জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ভাল ঢাল যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদের শত্রুর আঘাত হতে রক্ষাকারী ডালের মতো
রোজাদার জান্নাতে প্রবেশ করবে রায়হান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম হল রায়হান কেয়ামতের দিন ওই দরজা দিয়ে শুধুমাত্র রোজাদার ব্যক্তিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না আল্লাহর তরফ থেকে ঘোষণা করা হবে কোথায় সেই ভাগ্যবান রোজাদার গণ তখন তারা উঠে দাঁড়াবে এবং সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে
আল্লাহতালা কিয়ামতের দিন পানি পান করাবেন
আল্লাহর রব্বুল আলামিন নিজের উপর অবধারিত করে নিয়েছেন যে ব্যক্তি তার সন্তুষ্টের জন্য গ্রীষ্মকালেও রোজা রাখবে তাকে তিনি রোজ কিয়ামতের দিন পানি পান করাবেন আর যেই পানি পান করলে আর কোন পিপাসা থাকবে না আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেছেন যে রোজা আমার জন্য আর এর প্রতিদান আমি নিজের হাতেই দেব
রোজা হল জান্নাত লাভের পথ
হযরত হুজাইফা রাযিআল্লাহু তা'আলা বলেন আমি আল্লাহর নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমার বুকের সাথে মিলিয়ে নিলাম তারপর তিনি বললেন যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্ট কামোনার জন্য রোজা রাখবে সে ব্যক্তিও জান্নাতে প্রবেশ করবে
আরো পড়ুনঃ জান্নাত পেতে রোজার গুরুত্ব
এক হাদীসের তথ্য অনুযায়ী এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে গিয়ে বললেন ইয়া রাসুল আল্লাহ আমাকে এমন একটি আমল বলুন যা আমাকে জান্নাত লাভ করতে সহায়তা করবে তিনি বললেন তুমি রোজা রাখো আমি পুনরায় তাকে বললাম আমাকে একটি আমল বলে দিন যা আমাকে জান্নাত জান্নাতে নিয়ে যাবে তিনি বললেন তুমি রোজা রাখো এর সমতুল্য কিছুই নেই
শেষ কথা: কুরআন ও হাদিসের আলোকে রোজা তাৎপর্য গুরুত্ব এবং ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা পরের আলোচনা থেকে এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন রোজার তাৎপর্য গুরুত্ব ও ফজিলত কি আপনার যদি রোজার গুরুত্ব উপজিলত সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা না থাকে তাহলে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে ফেলুন
রমজান মাস হল ইবাদতের মৌসুম তাই এই মাসের সময় গুলো যতটা আল্লাহর সাথে কাটানো যায় ততই ভালো আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে হাদিস অনুযায়ী আমল করার ও উক্তি ফজিলত লাভ করার তৌফিক দান করুন আমিন
আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুর সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না এরকম আরো নতুন নতুন ইসলামিক তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইটটিতে নিয়মিত ভিজিট করুন
এতক্ষণ এই আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন হাদিস মেনে চলার চেষ্টা করুন আল্লাহ হাফেজ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url